• Breaking News

    আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা


    আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় "সিত্রাং" সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে। 

    আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা গেছে সেই ঘূর্ণিঝড়টির (নাম হবে সিত্রাং) কেন্দ্র সরাসরি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার কথা নির্দেশ করতেছে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ ভোর থেকে। 

    এখানে উল্লেখ্য যে বিশ্বের ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড় এর কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল যে ঘূর্ণিঝড়টির কারণে সেই ঘূর্ণিঝড়টিও আঘাত হেনেছিল এই বরিশাল বিভাগের উপকূলেই আজ থেকে ৫২ বছর পূর্বে ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে। এই ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসে ভোলা ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত কারণ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট কোন ঘূর্ণিঝড় এর নামকরণ করা হতো না। এই ঘূর্ণিঝড়টির পর থেকে নামকরণ করা শুর হয়। 

    গতকালের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়টির স্থল ভাগে আঘাত হানার সময় ২০ থেকে ২৫ শে অক্টোবর উল্লেখ করলেও আজকের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়টির স্থল ভাগে আঘাত হানার সময় প্রায় ৩ দিন এগিয়ে এসেছে। স্থাল ভাগে আঘাত হানার সময় ৩ দিন এগিয়ে আসার কারণ হলও পূর্বে ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভব্য গতিপথ ছিলও আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে। কিন্তু আজ ১০ ই অক্টোবর এর সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি  আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় পুরোপুরি উত্তর দিকে।  আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দূরত্ব অনেক কম ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অপেক্ষা। এই কারণে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির স্থাল ভাগে আঘাত কারার সময় ৩ দিন এগিয়ে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়টির স্থল ভাগে আঘাত হানার সময় ৩ দিন এগিয়ে আসা যদি খারাপ সংবাদ হয় তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ২ টি ভালো সংবাদও রয়েছে। প্রথম ভালো সংবাদটি হলও গতকালের পূর্বাভাস অপেক্ষা কিছুটা কম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এর সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। দ্বিতীয় ভালো সংবাদ হলও ঘূর্ণিঝড়টি আমাবস্যার (২৫ শে অক্টোবর) ৫ দিন পূর্বে স্থল ভাগে আঘাত করলে গতকাল উল্লেখিত ১৫ থেকে ২০ ফুট এর পরিবর্তে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলচর হতে পারে।    

    বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় মৌসুম ২ টি। একটি হলও এপ্রিল-মে-জুন মাসে ও অন্যটি হলও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। প্রথম মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হয় মে মাসে ও দ্বিতীয় মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হয় নভেম্বর মাসে। 

    ভোলা ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্র ১৯৭০ সালে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের ভোলা জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করে নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে। এই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়েছিল নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে; স্থলভাগে আঘাত করে ১২ তারিখে ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শেষ হয় ১৩ তারিখে। এই ঘূর্ণিঝড়টির কাড়নে সরকারি ভাবেই প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ ও বেসরকারি ভাবে ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিলও এই ঘূর্ণিঝড় এর পরে ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের পর্যাপ্ত সাহায্য না করা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের কর্তৃক। 

    সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি (সিডর) বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু (১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়) ঘটিয়েছিল সেই ঘূর্ণিঝড়টিও সংঘটিত হয়েছিল ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে। ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছিল নভেম্বর মাসের১১ তারিখে সৃষ্টি হয়ে নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করে। 

    বিশেষ দ্রষ্টব্য: ঘুর্নিঝড়টির স্হল ভাগে আঘাতের সঠিক স্হান সম্বন্ধে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে স্হল ভাগে আঘাত হানার স্হান সম্বন্ধে প্রায় ৮০ থেকে ৯০% নির্ভুল ভাবে পূর্বাভাস করা যায় ৩ দিন পূর্ব থেকে।

    © Mostofa Kamal Palash